ফরয গোসল করার নিয়ম-কানুন কি? কোন্ পদ্ধতিতে ফরয গোসল করতে হয়?
জিজ্ঞাসা: ফরয গোসল করার নিয়ম-কানুন কি? কোন্ পদ্ধতিতে ফরয গোসল করতে হয় এবং মেয়েলোক ও পুরুষের আলাদা কোন পদ্ধতি আছে কি-না? আর গোসলের পর নামায পড়তে পুনঃ উযু করতে হবে কি-না?
জবাব: গোসল করার সময় প্রথমে ইস্তিঞ্জা করে নিবে, অতঃপর পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে উভয় হাত ধুয়ে নিয়ে শরীর ও কাপড় থেকে নাপাকী দূর করবে। তারপর হাত ভাল করে পরিষ্কার করে নিবে। অতঃপর নামাযের উযুর মত অযু করে নিবে। অযুর সময় ভালভাবে গড়গড়া করবে এবং নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌছাবে। অযু শেষে মাথায় পানি ঢালবে। অতঃপর ডান কাঁধে ও পরে বাম কাঁধে পানি ঢালবে। এভাবে তিনবার সম্পূর্ণ শরীর ভালভাবে ঘষে গোসল শেষ করবে।
মেয়েলোক এবং পুরুষ লোকের গোসলের নিয়ম একই। তবে মেয়েলোকের খোপা বাঁধা থাকলে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছলে তা খোলা জরুরী নয়। কিন্তু পুরুষের চুল সম্পূর্ণ খোলা রাখতে হবে। উপরন্তু মেয়েদের নাক ও কানের অলংকার পরার ছিদ্রে যাতে পানি পৌঁছে তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
গোসলের পরে নতুন করে উযুর প্রয়োজন নেই। গোসলের সাথে উযু হয়ে যাবে। কেউ কেউ গোসল শেষে আবার উযু করেন, এমন করা অপচয়, হাদিছে অপচয়কারীকে "শয়তানের ভাই" বলা হয়েছে। তাই অপচয় থেকে বেঁচে থাকা জরুরী।
[প্রমাণ: ফাতাওয়া দারুল উলুম, ১৪১৪৬ # শামী ১:১১৯)
لو تكرر الوضوء في مجلس واحد مرارا لم يستحب الوضوء بل يكره لما فيه من الاسراف - (رد المحتار (۱۱۹/۱)
★সম্পূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে গোসল করা★
জিজ্ঞাসা: গোসলখানায় সম্পূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে গোসল করা জায়িয আছে কি না?
জবাব : যে গোসলখানায় বেপর্দা হওয়ার আশংকা নেই, তথায় একাকী উলঙ্গ অবস্থায় গোসল করা যদিও জায়িয, কিন্তু উলঙ্গ অবস্থায় গোসল না করাই উত্তম। কেননা, এটা তাকওয়ার খেলাফ। হাদীস শরীফে রাসূল (সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পর্দার সাথে গোসল করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, হুযুর (সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, 'আল্লাহ তা'আলা লজ্জাশীল ও গোপনীয়তা রক্ষাকারী এবং লজ্জা ও গোপনীয়তাকে ভালবাসেন। সুতরাং তোমরা পর্দার সাথে গোসল করো।'
[প্রমাণ: শরহে মুনিয়া, ৫১
#ফাতাওয়া আবদুল হাই, ১:১৬৫
#ফাতাওয়া দারুল উলুম, ১ঃ১৪৮
#শরহে কাবীর (হালবী কাবীর)]
★পুরুষাঙ্গ দিয়ে তরল পদার্থ বের হলে তার হুকুম★
জিজ্ঞাসা : উত্তেজনার সহিত পুরুষাঙ্গ হতে যদি লালা জাতীয় কিছু বের হয়ে যায়, তাহলে গোসল করা ফরয হবে কি-না? তা কাপড়ে লাগলে তা নাপাক হবে কি-না?
জবাব : উত্তেজনার সময় প্রাথমিক পর্যায়ে পুরুষাঙ্গ হতে লালা জাতীয় যা বের হয়, শরীয়তের পরিভাষায় উহাকে মযী বলে। আর মযী বের হওয়ার দরুন গোসল ফরয হয় না, বরং উযু করতে হয় এবং শরীরের ও কাপড়ের যে অংশে লাগবে ঐ অংশ পাক করা জরুরী।
[প্রমাণ: মেশকাত শরীফ, ১:৪০]
★ব্যবহৃত পানির ছিটা বালতিতে পড়লে তার হুকুম★
জিজ্ঞাসাঃ গোসল করার সময় যদি শরীর থেকে পানির ছিটা বালতিতে পড়ে যায় তাহলে ঐ পানি দিয়ে কি গোসল হবে?
জবাবঃ গোসলের সময় শরীর থেকে পানির ছিটা বালতিতে পড়লে কোনো সমস্যা নেই। একারণে বালতির পানি নাপাক হয় না। তাই বালতির ওই পানি দিয়ে গোসল করা সহীহ আছে। কারণ, গোসল ফরয অবস্থায় শরীরে বাহ্যিক নাপাকি লেগে না থাকলে শরীরে স্পর্শ করা পানি নাপাক নয়। তা الماء المستعمل তথা ব্যবহৃত পানির অন্তর্ভুক্ত। আর শরীরের ছিটা পানি যেহেতু খুবই সামান্য তাই তা বালতিতে পড়লেও সে পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে কোনো সমস্যা নেই।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৭৮৯, ৭৯১; কিতাবুল আছল ১/২০; বাদায়েউস সানায়ে ১/২১১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৮; শরহুল মুনয়া পৃ. ১৫৩;
রদ্দুল মুহতার ১/৩২৫
★গোসলে অপারগ হলে করণীয়★
জিজ্ঞাসাঃ গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে গোসল করতে অক্ষম। কিন্তু অযু করতে সক্ষম এবং তার নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিও রয়েছে। জানার বিষয় হলো, উক্ত অবস্থায় কি শুধু তায়াম্মুম করে নামায পড়লেই যথেষ্ট হবে নাকি তায়াম্মুমের সাথে অযুও করতে হবে?
জবাবঃ প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শুধু তায়াম্মুম করে নামায পড়বে, অযু করবে না। তায়াম্মুমের সাথে অযু করার বিধান নেই।
উল্লেখ্য, গোসলের জন্য তায়াম্মুম করার পরে ঐ ব্যক্তি থেকে অযু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে তখন অযু করা জরুরি। কেননা সে অযু করতে সক্ষম।
খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৩, ৩৮; রদ্দুল মুহতার ১/২৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৩০; আলবাহরুর রায়েক ১/১৫২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৯৪
★ঘুম থেকে উঠে কাপড় ভেজা পেলে করণীয়★
জিজ্ঞাসাঃ জনৈক ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে কাপড়ে ভিজা বা শক্ত শক্ত অনুভব করেছে। কিন্তু তার স্বপ্নের কথা স্মরণ নেই এবং এটা কি বীর্য না অন্য কিছু তাও বুঝতে পারছে না। আমার প্রশ্ন হল,উল্লেখিত অবস্থায় কি ঐ ব্যক্তির উপর গোসল করা কি ফরয?
জবাবঃ ঘুম থেকে উঠে কাপড়ে ভিজা পেলে কিংবা বীর্যের আলামত পেলে স্বপ্নের কথা স্মরণ না হলেও গোসল করা ফরয। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির জন্য গোসল করা ফরয। হাদীস শরীফে এসেছে, আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠার পর ভিজা অনুভব করে, কিন্তু তার স্বপ্নের কথা স্মরণ নেই তার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, হ্যাঁ, তাকে গোসল করতে হবে। আর ঐ ব্যক্তি যার স্বপ্নের কথা স্মরণ আছে কিন্তু সে কাপড়ে বা শরীরে কোনো ভিজা পায়নি তার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, না, তার জন্য গোসল করা জরুরি নয়।
জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪০; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৪৮-১৪৯; মাবসূত, সারাখসী ১/৬৯
উত্তর লিখনেঃ মুফতি আহমাদ বিন উমর
ইমাম ও খতীব মিস্তরী জামে মসজিদ, সিলেট।