আমাদের সম্পর্কে
সবুজে শ্যামলে ভরা আমাদের এদেশের বেশির ভাগ স্থানজুড়ে রয়েছে গ্রাম। আমাদের এ গ্রামগুলো যেন সবুজের লীলাভূমি। গ্রামের সবুজ প্রকৃতি যেকোনো মানুষের হৃদয়কে প্রশান্তিতে ভরে দেয়। গ্রামের শান্ত পরিবেশ মানুষের সকল ক্লান্তি দূর করে। গ্রামই এদেশের প্রাণ।
উমনপুর গ্রাম সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। গ্রামের বুকচিরে দক্ষিণ-উত্তরে সিলেট তামাবিল হাইওয়ে (এশিয়ান হাইওয়ে, সুপ্রাচীন সিলেট-সিলং মহাসড়ক) চলেগেছে। গ্রামের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো প্রশস্ত কাঁচা/পাকা রাস্তা পূর্ব- পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। গ্রামের উত্তরে শিকার খাঁ ও হরিপুর গ্রাম, দক্ষিণে পানিছড়া , পূর্বে উমনপুর হাওর ও পশ্চিমে চিকনাগুল চা বাগিছা রয়েছে।
উমনপুর গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় তিন হাজারের মত। গ্রামে মুসলিম – হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের লোক পারস্পারিক সোহার্দ ও সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করছে। এদের মধ্যে গ্রামের শিক্ষার হার শতকরা ৮৫ ভাগ রয়েছে। গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত লোকদের মধ্যে বিসিএস ক্যাডার, পিএইচডি ডিগ্রীদারি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সামরিক বাহিনী, শিক্ষক ও সরকারী চাকুরিজীবি আছেন। এছাড়া শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর সংখ্যাও কম নয়। গ্রামে রয়েছে কৃষক, জেলে, মাঝি সহ প্রভৃতি শ্রেনী ও পেষার লোক রয়েছে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ সহজ-সরল ও ধর্মভীরু। এই গ্রামে রেমিটেন্স যোদ্ধারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। গ্রামে বেশির ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলিম সবাই পরস্পর মিলেমিশে বসবাস করেন।
উমনপুর গ্রামে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কওমি মাদ্রাসা, একটি সরকারী স্বাস্থ্য কপ্লেক্স, একটি স-মিল, দুইটি রাইস মিল, ৮নং গ্যাস কূপ, কয়েকটি ফিশ ফার্ম ও কয়েকটি পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে। উমনপুর গ্রামে একটি জামে মসজিদ, দুইটি পাঞ্জেগান মসজিদ ও একটি মন্দির রয়েছে। এছাড়া একটি আগ্রনী ব্যাংক এর একটি শাখা, ফিলিং ষ্টেশন ও একটি দুলভ বিল রয়েছে। সাংস্কৃতিবাবে আমাদের গ্রাম খুবী উন্নত। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিপালন হয়ে থাকে। গ্রামে সবচেয়ে বড় উৎসব পল বাওয়া উৎসব । প্রতিবছর নিজস্য বিলে মহা-আনন্দে সকলের উপস্তিতিতে সকলে মিলে তা পালিত হয়। গ্রামের সকল হিন্দু - মুসলিম উভয় সপ্রদায়ের লোক মিলেমিশে সতস্ফুর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে এ গ্রামের মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। এ গ্রামের মানুষের সাহসী কথা ও বীরত্ব বাংলাদেশের প্রথম তৈল ও গ্যাস ক্ষেত্র (বর্তমান SGFL) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ হতে রক্ষা পেয়েছে। এই গ্রামের অনেক বীর সন্তান দেশ মাতৃকার জন্যে সংগ্রাম করেছেন কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সনদ সংগ্রহ করেন নাই।
উমনপুর একটি ডিজিটাল, নেটিজেন গ্রাম। যেই গ্রামের একটি ওয়েবসাইট এবং ফেইসবুক, ইউটিউব ও গুগলের মত প্লাটফর্মে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। গুগল ম্যাপে উমনপুর গ্রাম অত্যন্ত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যেমন - স্থান, স্থাপনা, রাস্তা, বাগান সহ যাবতীয় তথ্য সংযোক্ত করে। আমরা জানি যে গুগল ম্যাপ একজন মানুষকে অপরিচিত লোকেশনে কী পরিমাণ মাত্রায় সাহায্য করে তা বর্তমান সময়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।
উমনপুর গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোরম। গ্রামের আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল, বাঁশ বাগান, লেবু বাগান ও সুপারির বাগানগুলো সত্যিই নয়নাভিরাম। পাখিদের কলতান, সবুজ মাঠ, সোনালি ধানক্ষেত, বর্ষার পানিতে প্লাবিত জলাশয়— এসব দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর।
উমনপুর গ্রাম একটি আদর্শ গ্রাম। গ্রামের সকলের মধ্যে যথেষ্ট ভ্রাতৃত্ব ও মৈত্রীর ভাব বিদ্যমান।